অনলাইন প্রতিবেদন
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। তারিখ হবে ১২ অথবা ১৩ এপ্রিল।এ সময় যশোরের কেশবপুরের আওয়ামী লীগ নেতা সুবোধ মিত্র এমএনএ’কে বেনাপোল দেখা যায়। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা এবং ইপিআরদের নিয়ে পুরা যশোর সীমান্তে একটি অবস্থান তৈরি করে রেখেছেন। বিওপি গুলোতে ইপিআরদের খাদ্য ও রশদ সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন।
ওই সময় বেনাপোলে তার বাহিনীর সাথে বৈঠক চলাকালীন পাকিস্তানী বাহিনীর স্লিপার রাইফেলের একটি গুলি তার গাড়ীতে আঘাত হানে। সুবোধ মিত্র এখানে আসার সময় কয়েকটি পত্রিকা নিয়ে আসেন, যেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠনের সচিত্র বিবরন ছাপা হয়েছে। এতে সৈনিক ও আওয়ামী লীগ লিবারেশন আর্মির মধ্যে আনন্দ লক্ষ্য করা যায়।বর্তমান প্রজন্ম অনেকে সুবোধ মিত্রকে হয়তো সেই ভাবে চেনেন না। তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগানার বনগাঁ মডেল প্রাইমারি স্কুলে। আর তিনি জন্মগ্রহন করেছিলেন কেশবপুরের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে ১৯২৮ সালের ১২ মার্চ। শিশু বয়স থেকেই রাজনীতির প্রতি তাঁর প্রবল ঝোঁক ছিল। ১৯৪২ সালে বনগাঁ হাই স্কুলের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র থাকার সময় শুরু হয় ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন। এসময় বনগাঁতে বড় মিছিল হয়েছিল। ছাত্র মিছিলে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
সে কারণে গ্রেফতার হয়ে একদিনের জন্য কারাবরণ করেছিলেন।১৯৪৫ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি যশোর জেলা কমিউনিস্ট পার্টির জেলা কমিটিতে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৪৬ সালে বনগাঁ মহকুমা ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রথম কংগ্রেসের কমিটি গঠিত হলে তিনি সে কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
আওয়ামী মুসলীম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ হওয়ার পর সুবোধ মিত্র দেশ ও জনসাধারণের কল্যাণার্থে আওয়ামী লীগে যোগাযোগ করেন। ১৯৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফরে এসেছিলেন যশোরে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সাথে কেশবপুরের সন্তান সুবোধ মিত্রের পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে একই বছর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে সুবোধ মিত্র এক দীর্ঘ বক্তব্য দেন।
পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে তিনি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক এবং সহ-সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা আন্দোলন শুরু হলে তিনি আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন জনসভায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে সুবোধ মিত্র এ.ই ৪৬ যশোর নির্বাচনী কেন্দ্র আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন এবং ৪৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে এম.এ.এ নির্বাচিত হন ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বেনাপোল দিয়ে
ভারতে যান। এরপর কলকাতা, দিল্লী, মিরাট, নেপালসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে একজন আদর্শ সংগঠক হিসেবে দেশের স্বাধীনতার জন্য ছুটে বেড়ান। দেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে অটল বিহারী বাজপেয়ী, সুভদ্রা ঘোশী, ভারত সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক ডিরেকটর জেনারেল মিঃ বিডি, নেপালের রাজা মহেন্দ্রসহ তৎকালীন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বহু মানুষের সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। সারা জীবন মানুষটি সাধারন জীবন যাপন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার সুবোধ মিত্রের ছবি গুলো পাওয়া Dulok Ahmed ভাইয়ের কাছ থেকে। কৃতজ্ঞতা তাঁর প্রতি।
Leave a Reply