মোঃ শাহিনুর রহমান শাহিন, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি:
তিনি কেঁচো কম্পোজ সার নিজে তৈরি করে তা কৃষককের মাঝে বিনা পয়সায় বিতরণ করে বেশ সাড়া ফেলেছেন সাতক্ষীরা জেলায় কৃষকরা তা ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পাওয়ায় এলাকার অনেক কৃষক এখন তার এই সার নিয়মিত ব্যবহার করছেন। ইয়ারব হোসেন ইতোমধ্যে তার গ্রাম সদর উপজেলার তুজলপুরের ৩০ জন কৃষককের হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে কেঁচো কম্পোজ তৈরির সরঞ্জামাদি প্রদান করেছেন।
কম খরচে বাড়িতে তৈরি এই সার জমিতে ব্যবহার করছেন অনেক কৃষক। কৃষিকে এগিয়ে নিতে তিনি প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র কৃষি ও কৃষকদের মুখে হাসি ফোঁটানোর জন্য তার এ উদ্যোগ।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি কৃষক ইয়ারব হোসেন দীর্ঘ দিন ধরে কৃষি কাজে নিয়োজিত। তিনি জানান, প্রথমে কেঁচোতে হাত দিলে গা ঘিন ঘিন করতো। তারপরও প্রাণীটি কৃষকের পরম বন্ধু। তাই তাকে আর অবহেলা করতে পারলাম না। মাটির উর্বরা শক্তি বাড়াতে প্রকৃতির লাঙ্গল হিসেবে কাজ করে। মাটির জৈব সার তৈরিতেও এর জুড়ি নেই। একটা সময় ছিল যখন মাটি খুঁড়লেই কেঁচো কিলবিল করতো। বর্তমানে জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরা শক্তি যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে কেঁচোও। এর কুফল ভোগ করেছে কৃষকরা। কেঁচো দিয়ে জমির উর্বরা শক্তি বাড়াতে তৈরি করা হচ্ছে জৈব সার। যা ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ইয়ারব হোসেন আরো জানান, বছর খানের আগে কৃষি বিভাগের আয়োজনে কৃষকদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানে যান তিনি। সেখানে গোবর দিয়ে কেঁচো কম্পোজ সার তৈরির উপর আলোচনা শোনেন। ওই কথা শোনার পর শুরু করেন গোবর দিয়ে কেঁচো কম্পোজ সার তৈরির সংগ্রাম। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কেঁচো নিয়ে প্রথমে চারটি সিমেন্টের নান্দা (মাটির পাত্র) দিয়ে শুরু করেন এ চাষ। খুব সহজে তৈরি করা যায় এ সার। খরচ নেই বললেই চলে। বর্তমানে ,৩২টি নান্দায় তৈরি করা হচ্ছে এই সার। এসব কেঁচো দেখতে লাল। গোবর খেয়ে এগুলো যে মল ছাড়ে এটিই জৈবসার। দেখতে চায়ের দানার মতো লালচে কালো। এই সার জনপ্রিয় করার জন্য কৃষকদের মাঝে বিনামুল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি দুই বিঘা ধানের জমিতে এই সার ব্যবহার করেছেন। ব্যবহারের ফলে তার জমিতে বাড়তি ফলন দেখে আশপাশের কৃষকরা জৈব সার ব্যবহারে আরো আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এই সার জমিতে ব্যবহার করা হলে জমিতে কোন প্রকার রাসায়নিকদ্রব্য ব্যবহার করা লাগেনা। বর্তমানে কৃষদের প্রয়োজনে তারা নিজেরা কেঁচো দিয়ে কম্পোজ সার বাড়িতে তৈরি করছেন। নিজের বাড়িতে গরু থাকলে এই কেঁচো চাষ ও সার উৎপাদরে বাড়তি কোনা খরচ হয়না। শীতকাল ছাড়া সারা বছর কেঁচোর বাচ্চা হয়। আর এ গুলোর বংশবিস্তারও খব দ্রæত ঘটে। অল্প দিনে পাঁচ হাজার কেঁচো থেকে তার বর্তমানে প্রায় তিন লাখ কেঁচো দিয়ে এই সার তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন অল্প কেঁচো নিয়ে শুরু করেন কেঁচো কম্পোজ সার। এখন কমপক্ষে দশ লাখ কেঁচো রয়েছে।
তুজলপুর গ্রামের কৃষক আমিনুর ইসলাম জানান, তিনি ১০ কাঠা জমিতে পটোল চাষ করেছেন। পটলে প্রচুর ইউরিয়া সারের ব্যবহার লাগে। ইউরিয়া সারের বদলে ইয়ারব হোসেনের উদপাদিত জৈবসার এখন তিনি ব্যবহার করছেন। এতে তার খরচও কম হচ্ছে। জমির উর্বরতা শক্তি বেড়ে পটোলের চেহারা ও ফলন বেড়েছে। তিনি আরো জানান, কৃষককের বন্ধু হিসেবে পরিচিত ইয়ারব হোসেন আমাকে চারটি সিমেন্টের নান্দা, কেঁচো ও ছাউনির জন্য বিনামূল্যে টিন কিনে দিয়েছেন। বাড়িতে থাকা গরুর গোবর ও ইয়ারব হোসেনের দেয়া উপকরণ দিয়ে তিনি বর্তমানে নিজে জৈবসার তৈরি করছেন। বাড়িতে তৈরি জৈব সার নিজের জমিতে ব্যবহার করে কৃষিতে লাভবান হচ্ছে। ইতোমধ্যে সার জনপ্রিয় করার জন্য বিনামুল্যে সার কৃষকদের মধ্যে দিচেছ।
কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন জমির শক্তি কমে যাচেছ দিন দিন, রাসায়নিক সার জমির ক্ষতি করছে। আস্তে আস্তে সার ছাড়া ফসল হচেছ না। রাসায়নিক সার কিছূ বাতাসা উড়ে যায় ।ইয়ারব হোসেন টাকা ছাড়াই আমাদেরকে জৈব সার দেন । এখন এলাকার বহু কৃষক কেঁচো কম্পোজ সার চাষে ব্যাবহার করছে।
কম্পোজ সার লেবু,পিয়ার,পান,ছাদ বাগান,পাট,পটল,সবজি চাষে ব্যাপক হারে ব্যাবহার হচেছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম জানান, কেঁচো কম্পোজ সার তৈরি করে ইতোমধ্যে জেলাব্যাপী কৃষক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন ইয়ারব হোসেন। তিনি নিজে সার তৈরি করে কৃষকের ফসলের জন্য তা বিনামূল্যে দিচ্ছেন। তার উদ্যেশ্য হলোÑ এ সারকে জনপ্রিয় করে তোলা। তার খামার পরিদর্শন করেছি। তার সার নিজের তৈরি দেখে গ্রামের ২২ জন কৃষক কেঁচো কম্পোজ সার তৈরি করছেন। তিনি কেঁচো ও উপকরণ দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করছেন। কৃষকরা নিজের তৈরি সার জমিতে ব্যবহার করছেন। কেঁচো কম্পোজ সার ফসল উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এ সারে রয়েছে পানি, নাইট্রোজেন, পটাশ, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সালফার ও বোরন। এ সার মাটির পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে। বেলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহয্য করে। মাটিতে উপকারি অণুজীবের কার্যক্রম বৃদ্ধি করে। মাটির ভৌত রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাগুন বৃদ্ধি করে। এ স্যার ব্যবহারে মাটির গঠন উন্নত হয় এবং উৎপাদিত ফসলের গুণগতমান ভালো হয়।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল আমিন জানান, সাংবাদিক কাম কৃষক ইয়ারব হোসেন কৃষিকে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করছেন। তিনি কেঁচো কম্পোজ সার তৈরি করে সাধারণ কৃষকরে মধ্যে বিতরণ করছেন। তিনি ইতোমধ্যে কৃষকদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন। তিনি আরো জানান, ইয়ারব হোসেন বৃক্ষ সংরক্ষণ ও গবেষনা জন্য ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কারও পেয়েছেন।
তিনি ইতিমধ্যে এন এপিটি প্রকল্প থেকে কৃষি উদ্যক্ত হিসেবে সরকারি সহযোগিতা পেয়েছি ।
Leave a Reply